ইনকিলাবের জরিপ; নৌকা ১২৬ ধানের শীষ ১২৯

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সারা দেশে চালানো জরিপ প্রকাশ করে জাতীয় দৈনিক ইনকিলাব। জরিপে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ১২৬ আসন ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ১২৯ আসন পেতে পারে বলে বলা হয়েছে। এছাড়াও জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকে ৯টি এবং জেপি সাইকেল প্রতীকে ১টি আসন পেতে পারে বলে দাবী করা হয়েছে জরিপে।

আজ (২৭ ডিসেম্বর) দৈনিকটি এ জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে।

এর বাহিরে বাকি ৩৫টি আসনের কয়েকটিতে ত্রিমুখী এবং অধিকাংশ আসনে হবে নৌকা-ধানের শীষের দ্বিমুখী লড়াই হবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে জরিপে।

জরিপটি করা হয়েছে দৈনিক ইনকিলাবের ব্যুরো, আঞ্চলিক অফিস, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সাংবাদিকদের দিয়ে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে গত কয়েকদিনে মূলত তারা দৈবচয়ন পদ্ধতিতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মতামত নিয়ে এই জরিপ করেন।

রাজধানী ঢাকা, বিভাগীয় শহর, জেলা-উপজেলা শহর ও গ্রামাঞ্চলের নারী-পুরুষ ভোটার, নতুন ভোটার এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নেয়া হয়। এই জরিপে ‘আন্তর্জাতিক মানদন্ড’ পুরোপুরি ফলো করা হয়নি; তবে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মতামত নেয়ার সময় তাদের রাজনৈতিক পরিচিতি-বিশ্বাস, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং আর্থিক মানদন্ডে বাছবিচার করা হয়নি। ৬৪ জেলার ভোটারের মতামতেই এই চিত্র উঠে আসে।

জরিপ মূলত করা হয়েছে আসনভিত্তিক।
রংপুর বিভাগের ৩৩টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ভোট হবে ৩২টিতে। এর মধ্যে ৭টি আসনে মহাজোটের নৌকা, ১০টিতে ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষ, ৪টি। ধানের শীষ প্রার্থী ড. টিআইএম ফজলে রাব্বী চৌধুরীর মৃত্যুর কারণে গাইবান্ধা-৩ আসনের নির্বাচন স্থগিত হয়েছে। অন্য ১১টি আসনে কোথাও দ্বিমুখী, কোথাও ত্রিমুখী লড়াই হবে বলে জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে।

রাজশাহী বিভাগের আসন সংখ্যা ৩৯টি। বর্তমান অবস্থায় ভোট হলে নির্বাচনে নৌকা ৮টি, ধানের শীষ ২৪টি, লাঙল ১টি আসনে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অন্য ৪টি আসনে হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।

খুলনা বিভাগে আসন সংখ্যা ৩৬টি। এই বিভাগে নৌকা ১৭টি এবং ধানের শীষ ১৯টিতে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বরিশাল বিভাগে আসন সংখ্যা ২১। নৌকার প্রার্থী ৮টি, ধানের শীষ ১০টি ও জাপা (সাইকেল) ১টি আসনে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাকী ২ আসনে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যে হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।

ময়মনসিংহ বিভাগে সংসদীয় আসন সংখ্যা ২৪। নৌকার প্রার্থী ১৩টি, ধানের শীষ প্রার্থী ৮টি ও লাঙল প্রার্থী ১টিতে নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

ঢাকা বিভাগে আসন সংখ্যা ৭০। বর্তমান পরিস্থিতি ভোট হলে মহাজোটের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ৪০ আসন ও ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের ২৪টি আসন পাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। এই বিভাগে মহাজোটের শরিক লাঙল প্রতীকের ৩ আসন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে ৩টি আসনে হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।

সিলেট বিভাগে আসন সংখ্যা ১৯। নৌকা প্রার্থী ৪টি, ধানের শীষ ১২টি বিজয়ী হওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। বাকী ৩টি আসনে নৌকা আর ধানের শীষ প্রার্থীদের মধ্যে হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।

পার্বত্য তিন জেলাসহ চট্টগ্রাম বিভাগে আসন সংখ্যা ৫৮। এর মধ্যে নৌকা ২৯ এবং ধানের শীষ ২২ আসনে বিজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। বাকী আসনগুলোয় হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।

নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও সন্ত্রাসের ঘটনায় আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। নির্বাচন ও সন্ত্রাস একসঙ্গে চলতে পারে না। কমিশন তা হতে দিতে পারে না।

আজ বুধবার দুপুরে আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে এক লিখিত বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিজের বিবেচনায় রাজনৈতিক দল, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী, নির্বাচনী কর্মকর্তা ও ভোটারদের উদ্দেশ্যে চারটি বার্তা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

মাহবুব তালুকদার বলেন, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর একটি সহিংসতামুক্ত পরিবেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন না করতে পারলে এই স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে। আমরা তা হতে দিতে পারি না।

ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে আসুন। আপনার ইচ্ছানুযায়ী প্রার্থীকে ভোট দিন। ভয়ভীতি বা প্রলোভনের কাছে নতি স্বীকার করবেন না। আপনার একটি ভোট গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ। মনে রাখবেন, এবারের নির্বাচন আমাদের আত্মসম্মান সমুন্নত রাখার নির্বাচন। এবারের নির্বাচন আগামী প্রজন্ম ও আপনার সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণের নির্বাচন।

রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যে মাহবুব তালুকদার বলেন, নির্বাচন কেবল অংশগ্রহণমূলক হলে হয় না, নির্বাচনকে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও আইনানুগ হতে হয়। এছাড়া, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য না হলে বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসাবে আমরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারব না। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করে আমরা কলঙ্কিত হতে চাই না। নির্বাচনে যিনি বা যারাই জয়লাভ করুন, দেশের মানুষ যেন পরাজিত না হয়।

একইভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্যে এই জ্যেষ্ঠ কমিশনার বলেন, অতি উৎসাহী হয়ে কোন অনভিপ্রেত আচরণ করবেন না। আপনারা নির্বাচনের সবচেয়ে বড় সহায়ক শক্তি। প্রত্যেকের প্রতি সম আচরণ ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন আপনাদের কর্তব্য। নির্বাচনে পক্ষপাতমূলক আচরণ থেকে বিরত থাকুন। নিজেদের পোষাকের মর্যাদা ও পবিত্রতা রক্ষা করুন।

এছাড়া রিটার্নিং অফিসারসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জাতির ক্রান্তিকালে আপনারা এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করছেন। বিবেক সমুন্নত রেখে অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হয়ে সাহসিকতার সঙ্গে আইন অনুযায়ী নিজেদের দায়িত্ব পালন করুন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণে আপনাদের অবদান জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে। কোনো কলুষিত নির্বাচনের দায় জাতি বহন করতে পারে না।–ইনসাফ২৪